কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
কালিন্দী নদীর বুকে জেগে উঠা নতুন চর ও তার দখল নিয়ে লড়াইয়ের রোমাঞ্চকর গল্প। বইটিতে খুব ভালোভাবে জমিদার, মহাজন, প্রজাদের মধ্যে সংঘাতের কাহিনী ফুটে উঠেছে ।
কাহিনীর সারসংক্ষেপ:
- কালিন্দী নদীর তীরে 'চর বালিয়া' নামে একটি নতুন চর জাগে।
- জমিদার মহীন্দ্র চক্রবর্তী ও ইন্দ্র রায় চরের মালিকানার দাবী করে।
- তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়, যাতে গ্রামের সাধারণ মানুষ, মহাজন, সকলেই জড়িয়ে পড়ে।
- চরের মালিকানা কার হবে, তা নিয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনাপ্রবাহ।
উপন্যাসের প্রধান দিক:
- গ্রামবাংলার জীবনযাত্রার চিত্রণ।
- জমিদার-প্রজার সংঘাত।
- মানুষের লোভ, স্বার্থপরতা ও ক্ষমতার লড়াই।
- নারীর প্রতি অত্যাচার ও নির্যাতন।
- প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রুদ্ররূপ।
কালিন্দী - বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। 1940 সলে প্রকাশিত কালিন্দী উপন্যাসটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসাধারণ লেখনীশৈলী ও গল্প বলার দক্ষতায় অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
আপনার যদি বাংলা সাহিত্য ও অতীতের গ্রাম বাংলার জীবনযাপন সম্পর্কে গল্প উপন্যাস পড়তে চান, কালিন্দী আপনার জন্য একদম সঠিক নির্বাচন।
তাই এখুনি বাংলা স্টোরী . ইন এ আপনি কালিন্দী উপন্যাসটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়া শুরু করুন।
সকলের আছে বিনীত অনুরোধ, যদি আপনার কাছে বইটি কিনে পড়ার যথেষ্ট অর্থ থাকে তবে অবশ্যই বইটি কিনে পড়ুন। এতে পাবলিশার্স ও লেখক দুজনেই আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন ও আরো লেখার আগ্রহ পাবেন।
কালিন্দী উপন্যাসটি Amamzon থেকে কিনতে এখানে ক্লিক করুন। দাম 275/- টাকা
1. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
নদীর ও-পারে একটা চর দেখা দিয়াছে।
রায়হাট গ্রামের প্রান্তেই ব্রাহ্মণী নদী–ব্রাহ্মণীর স্থানীয় নাম কালিন্দী, লোকে বলে কালী নদী; এই কালী নদীর ও-পারের চর জাগিয়াছে। এখন যেখানে চর উঠিয়াছে, পূর্বে ওইখানেই ছিল কালী নদীর গর্ভভূমি। এখন কালী রায়হাটের একাংশ গ্রাস করিয়া গ্রামের কোলে কোলে বহিয়া চলিয়াছে। গ্রামের লোককে এখন বিশ হাত উঁচু ভাঙন ভাঙ্গিয়া নদীগর্ভে নামিতে হয়। আরো পড়ুন...
2. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সুনীতি রায় বংশের ছোট বাড়ির মালিক ইন্দ্র রায়কে বলেন –দাদা। কিন্তু ইন্দ্র রায়ের সঙ্গে তাঁহার কোন সম্পর্ক নাই। ইন্দ্র রায় রামেশ্বর চক্রবর্তীর প্রথমা পত্নী রাধারাণীর সহোদর। চক্রবর্তী-বংশের সহিত রায়-বংশের বিরোধ আজ তিন পুরুষ ধরিয়া চলিয়া আসিতেছে; রায় বংশের সকলেই চক্রবর্তীদের প্রতি বিরূপ, কিন্তু এই ছোট বাড়ির সহিতই বিরোধ যেন বেশী। তবুও আশ্চর্যের কথা, রামেশ্বর চক্রবর্তীর সহিত ছোট বাড়ির রায়-বংশের কন্যার বিবাহ হইয়াছিল। আরো পড়ুন...
3. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ইন্দ্র রায় সত্যই বলেছিলেন, চরটা কীট-পতঙ্গ-সরীসৃপে পরিপূর্ণ।
গ্রামের কোলেই কালিন্দী নদীর অগভীর জলস্রোত পার হইয়া খানিকটা বালি ও পলিমাটিতে মিশানো তৃণহীন স্থান, তার পরেই আরম্ভ হইয়াছে চর। সমগ্র চরটা বেনাঘাস আর কাশের ঘন জঙ্গলে একেবারে আচ্ছন্ন হইয়া আছে। তাহারই মধ্যে বাসা বাঁধিয়া আছে-অসংখ্য প্রকারের কীট-পতঙ্গ আর সাক্ষাৎ মৃত্যুদূতের মত ভয়ঙ্কর নানা ধরনের বিষধর সাপ আরো পড়ুন...
4. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়া লক্ষ্মীর ঘরে গৃহলক্ষ্মীর সিংহাসনের সম্মুখে পিলসুজের উপর প্রদীপটা রাখিয়া সুনীতি গলায় আঁচল জড়াইয়া প্রণাম করিলেন। গনগনে আগুন ভরিয়া ঝি ধুপদানি হাতে ঘরের বাহিরে দাঁড়াইয়া ছিল। ধুপদানিটি তাহার হাত হইতে লইয়া সুনীতি আগুনের উপর ধুপ ছিটাইয়া দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ধুপগন্ধে ঘরখানি ভরিয়া উঠিল। আরো পড়ুন...
5. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
অতি প্রত্যূষে শয্যাত্যাগ করা ইন্দ্র রায়ের চিরদিনের অভ্যাস। এককালে ভোরে উঠিয়া বাহিরে আসিয়া নিয়মিত ব্যায়াম করিতেন। বয়েসের সঙ্গে ব্যায়ামের অভ্যাস আর নাই, কিন্তু এখনও তিনি শয্যা পরিত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিয়া নিয়মিত খানিকটা হাঁটিয়া আসেন আরো পড়ুন...
6. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সমস্ত গ্রামে রটিয়া গেল, রামেশ্বর চক্রবর্তীর ছোট ছেলে অহীন্দ্র ইন্দ্র রায়ের নাক কাটিয়া ঝামা ঘষিয়া দিয়াছে; ইন্দ্র রায় সাঁওতালদের আটক করিয়া রাখিয়াছিলেন, অহীন্দ্র জোর করিয়া তাহাদের উঠাইয়া লইয়া আসিয়াছে। রটনার মূলে ওই অচিন্ত্যবাবুটি! তিনি একটু আড়ালে দাঁড়াইয়া দূর হইতে যতটা দেখা ও শোনা যায়, দেখিয়া শুনিয়া গল্পটি রচনা করিয়াছিলেন। তিনি প্রচণ্ড একটা দাঙ্গা-হাঙ্গামার কল্পনা করিয়া সভয়ে স্থানত্যাগ করিয়াও নিরাপদ দূরত্বের আড়ালে থাকিয়া ব্যাপারটা দেখিবার লোভ সংবরণ করিতে পারেন নাই। আরো পড়ুন...
7. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মহীন্দ্র যোগেশ মজুমদারকে সঙ্গে লইয়া, পূর্বদিন রাত্রেই আসিয়া পৌঁছাইয়াছিল। বার্তা নাকি বায়ুর আগে পৌঁছিয়া থাকে- এ কথাটা সম্পূর্ণ সত্য না হইলেও মিথ্যা বলিয়া একেবারেই অস্বীকার করা চলে না। পঞ্চাশ মাইল দূরে বর্হিজগতের সহিত ঘনিষ্ঠসম্পর্কহীন একখানি পল্লীগ্রামেও কেমন করিয়া কথাটা গিয়া পৌঁছিল, তাহা ভাবিলে সত্যই বিস্মিত হইতে হয়। সুনীতির পত্রও তখন গিয়া পৌঁছে নাই। আরো পড়ুন...
8. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বজ্রের আঘাতের মত আকস্মিক নির্মম আঘাতে সুনীতির বুকখানা ভাঙিয়া গেলেও তাঁহার কাঁদিবার উপায় ছিল না। সন্তানের বেদনায় আত্মহারা হইয়া লুটাইয়া পড়িবার শ্রেষ্ঠ স্থান হইল স্বামীর আশ্রয়। কিন্তু সেইখানেই সুনীতিকে জীবনের এই কঠিনতম দুঃখকে কঠোর সংযমে নিরুচ্ছ্বাসিত স্তব্ধ করিয়া রাখিতে হইল। অপরাহ্নে কাণ্ডটা ঘটিয়া গেল, সুনীতি সমস্ত অপরাহ্নটাই মাটির উপর মুখ গুঁজিয়া মাটির প্রতিমার মত পড়িয়া রহিলেন, সন্ধ্যাতে তিনি গৃহলক্ষ্মীর সিংহাসনের সম্মুখে ধূপপ্রদীপ দিতে পর্যন্ত উঠিলেন না। আরো পড়ুন...
9. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এক বৎসরের মধ্যেই চক্রবর্তী-বাড়ির অবস্থা হইয়া গেল বজ্রাহত তালগাছের মত। তালগাছের মাথায় বজ্রাঘাত হইলে সঙ্গে সঙ্গেই সে জ্বালিয়া পুড়িয়া ভস্মীভূত হইয়া যায় না। দিন কয়েকের মধ্যেই পাতাগুলি শুকাইয়া যায়, তারপর শুষ্ক পাতাগুলি গোড়া হইতে ভাঙিয়া ঝুলিয়া পড়ে, ক্রমে সেগুলি খসিয়া যায়, অক্ষত-বহিরঙ্গ সুদীর্ঘ কাণ্ডটা ছিন্নকণ্ঠ হইয়া পুরাকীর্তির স্তম্ভের মত দাঁড়াইয়া থাকে। আরো পড়ুন...
10. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
দীর্ঘকাল পরে হেমাঙ্গিনী রামেশ্বরকে দেখিলেন। রামেশ্বরের কথা মনে হইলেই তাঁহার স্মৃতিতে ভাসিয়া উঠিত রামেশ্বরের সেকালের ছবি। পিঙ্গল চোখ, পিঙ্গল চুল, তাম্রাভ গৌর বর্ণ, বিলাসী কৌতুকহাস্যে সমুজ্জ্বল একটি যুবকের মূর্তি। আর আজ এই রুদ্ধদ্বার অন্ধকারপ্রায় ঘরের মধ্যে বিষণ্ণ স্তব্ধ শঙ্কাতুর এক জীর্ণ প্রৌঢ়কে দেখিয়া তিনি শিহরিয়া উঠিলেন। চোখে তাঁহার জল আসিল। সুনীতির সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় না থাকিলেও পরস্পর পরস্পরকে সামাজিক ক্ষেত্রে দেখিয়াছেন, সুতরাং তাঁহাকে চিনিতে সুনীতির বিলম্ব হইল না। তিনি অতি ধীরভাবে সাদর সম্ভাষণ জানাইয়া মৃদুকণ্ঠে বলিলেন, আসুন আসুন, দিদি আসুন। তাড়াতাড়ি তিনি একখানা আসন পাতিয়া দিলেন। আরো পড়ুন...
11. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ভোরবেলাতেই রংলাল সদলে আসিয়া ডাকাডাকি শুরু করিল। অতি প্রত্যুষে উঠিয়া কাজ করার অভ্যাস মানদার চিরদিনের; সে কাজ করিতে করিতেই বিরক্ত হইয়া উত্তর দিল, কে গো তুমি? তুমি তো আচ্ছা নোক! এই ভোরবেলাতে কি ভদ্দর নোকে ওঠে নাকি? এ কি চাষার ঘর পেয়েছ নাকি?
রংলাল বিরক্ত হইয়া উঠিল, কণ্ঠস্বরের মধ্যে যথাসাধ্য গাম্ভীর্যের সঞ্চার করিয়া সে বলিল, ডেকে দাও, ছোটদাদাবাবুকে ডেকে দাও। জরুরী কাজ আছে। আরো পড়ুন...
12. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সেই দিনই অপরাহ্নে সাঁওতালেরা খাজনার টাকা পাই পাই পয়সা হিসাব করিয়া মিটাইয়া দিল। কিন্তু গোল বাধাইল রংলাল-নবীনের দল। তাহারাও ধরিয়া বসিল, খাজনা ছাড়া সেলামি তাহারা দিতে পারিবে না। সাঁওতালদের চেয়েও কি তাহারা চক্রবর্তী-বাড়ির পর? অহীন্দ্র চুপ করিয়া রহিল, কোন উত্তর দিতে পারিল না। রংলাল-নবীনের যুক্তি খণ্ডন করিবার মত বিপরীত যুক্তি খুঁজিয়া সে সারা হইয়া গেল। অনেকক্ষণ নীরবে উত্তরের অপেক্ষা করিয়া রংলাল বলিল, দাদাবাবু, তাহলে হুকুমটা করে দিন আজ্ঞে। আরো পড়ুন...
13. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
জৈষ্ঠের শেষে কয়েক পসলা বৃষ্টি হইয়া মাটি ভিজিয়া সরস হইয়া উঠিল। কয়েক দিনের মধ্যেই চরটা হইয়া উঠিল ঘন সবুজ।
চাষীর দল হাল-গরু লইয়া মাঠে গিয়া পড়িল। ধানচাষের সময় একেবারে মাথার উপর আসিয়া পড়িয়াছে। কাজেই নবীন ও রংলাল ধানের জমি লইয়া ব্যস্ত হইয়া পড়িল, চরটার দিকে আর মনযোগ দিতে পারিল না। আরো পড়ুন...
14. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রংলাল মনের ক্ষোভে রক্তচক্ষু হইয়াই শ্রীবাসের বাড়িতে হাজির হইল। শ্রীবাস তখন পাশের গ্রামের জন কয়েক মুসলমানের সঙ্গে কথা বলিতেছিল। ইহারা এ অঞ্চলের দুর্দান্ত লোক, কিন্তু শ্রীবাসের খাতক। বর্ষায় ধান, হঠাৎ প্রয়োজনে দুই-চারিটা টাকা শ্রীবাস ইহাদের ধার দেয়, সুদ অবশ্য লয় না, কারণ মুসলমানদের ধর্মশাস্ত্রে সুদ লওয়া মহাপাতক। আরো পড়ুন...
15. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সর্বনাশা চর।
উহার বুকের মধ্যে কোথাও যেন লুকাইয়া আছে রক্তবিপ্লবের বীজ। দাঙ্গায় খুন হইয়া গেল একটা; তাহার উপর জখমের সংখ্যাও অনেক। চরের ঘাস বাহিয়া রক্তের ধারা মাটির বুকে গড়াইয়া পড়িল। আরো পড়ুন...
16. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সেই বন্দোবস্তই হল।
অহীন্দ্র কলেজ কামাই করিয়াই আসিল। সুনীতি অহীন্দ্রকে লইয়া একটু শঙ্কিত ছিলেন। রামেশ্বরের সন্তান, মহীর ভাই সে। অহীন্দ্র কিন্তু হাসিয়া বলিল, এর জন্যে তুমি এমন লজ্জা পাচ্ছ কেন মা? এ-সংসারের সত্যকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করা প্রত্যেক মানুষের ধর্ম, এতে রাজা-প্রজা নেই, ধনী-দরিদ্র নেই। বিচারক মানুষ হলেও তিনি বিধাতার আসনে বসে থাকেন। আরো পড়ুন...
17. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মামলার রায় বাহির হইল আরও আট মাস পর। দীর্ঘ দুই বৎসর ধরিয়া মকদ্দমা। দায়রা-আদালতের বিচারে দাঙ্গা ও নরহত্যার অপরাধে নবীন বাগদী ও তাহার সহচর দুইজন বাগদীর কঠিন সাজা হইয়া গেল। নবীনের প্রতি শাস্তিবিধান হইল ছয় বৎসর দ্বীপান্তর বাসের; আর তাহার সহচর দুইজনের প্রতি হইল দুই বৎসর করিয়া সশ্রম কারাবাসের আদেশ। দায়রা মকদ্দমা; সাক্ষীর সংখ্যা একশতের অধিক; তাহাদের বিবৃতি, জেরা এবং দীর্ঘ বিবৃতি ও জেরা বিশ্লেষণ করিয়া উভয় পক্ষের উকিলের সওয়াল-জবাবে শেষ হইতে দীর্ঘদিন লাগিয়া গেল। দাঙ্গা ঘটিবার দিন হইতে প্রায় দুই বৎসর। আরো পড়ুন...
18. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে আবার কালীন্দির বুকে বান আসিয়া পড়িল।
এক দিকে রায়হাট, অন্য দিকে সাঁওতালদের ‘রাঙাঠাকুরের চর’-এই উভয়ের মাঝে রাঙা জলের ফেনিল আবর্ত ফুলিয়া ফুলিয়া খরস্রোতে ছুটিয়া চলিয়াছে। আবর্তের মধ্যে কলকল শব্দ শুনিয়া মনে হয়, সত্য সত্যই কালী যেন খলখল করিয়া হাসিতেছে। কালী এবার ভয়ঙ্করী হইয়া উঠিয়াছে। আরো পড়ুন...
19. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
একা অহীন্দ্র নয়, অমল এবং অহীন্দ্র দুইজনেই প্রাতঃকালে কালিন্দীর ঘাটে আসিয়া বসিয়াছিল। বর্ষার জলে ভিজিবার জন্যে দুইজনে বাড়ি হইতে বাহির হইয়াছিল। নদীর ঘাটে আসিয়া কালীর বন্যা দেখিয়া সেইখানে তাহারা বসিয়া পড়িল। আরো পড়ুন...
20. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সেদিন অপরাহ্নে দুর্যোগটা সম্পূর্ণ না কাটিলেও স্তিমিত হইয়া আসিল। বর্ষণ ক্ষান্ত হইয়াছে, পশ্চিমের বাতাস স্তব্ধ হইয়া দক্ষিণ দিক হইতে মৃদু বাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়াছে। সেই বাতাস আকাশের মেঘগুলির দিক্পরিবর্তন করিয়া উত্তর দিকে চলিয়াছে। আরো পড়ুন...
সকলের আছে বিনীত অনুরোধ, যদি আপনার কাছে বইটি কিনে পড়ার যথেষ্ট অর্থ থাকে তবে অবশ্যই বইটি কিনে পড়ুন। এতে পাবলিশার্স ও লেখক দুজনেই আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন ও আরো লেখার আগ্রহ পাবেন।
কালিন্দী উপন্যাসটি Amamzon থেকে কিনতে এখানে ক্লিক করুন। দাম 275/- টাকা
21. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
চিনির কল ব্যবসায়ী ভদ্রলোকটির নাম বিমলবাবু। বিমলবাবু পরদিন সকালে গিয়া চর দেখিয়া আসিলেন। রাত্রের মধ্যে বান অনেক কমিয়াছে, তবুও চরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখনও জলমগ্ন; সেই অবস্থাতেই তিনি চরটি দেখিয়া খুশি হইয়া উঠিলেন। সকলের চেয়ে বেশী খুশি হইলেন তিনি সাঁওতালদের দেখিয়া। ছোট রায়-বাড়ির নায়েব মিত্তির ছিল তাঁহার সঙ্গে, বিমলবাবু মিত্তিরকে বলিলেন, অদ্ভুত জাত মশায় এরা, যেমন স্বাস্থ্য, তেমনি কি খাটে! আমাদের দেশী লোকের মত নয়, ফাঁকি দেয় না। আরো পড়ুন...
22. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এ দিকে গ্রামের মধ্যে একটা প্রকাণ্ড জটলা পাকাইয়া উঠিল। সকাল হইতে না হইতে গ্রামের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত রটিয়া গেল, ও-পারের চরের উপর চিনির কল বসিতেছে। খাস কলিকাতা হইতে এক ধনী মহাজন আসিয়াছেন, তিনি সঙ্গে আনিয়াছেন প্রচুর টাকা-ছোট একটি ছালায় পরিপূর্ণ এক ছালা টাকা। সঙ্গে সঙ্গে রায়বংশের অন্য সমস্ত শরিকেরা একেবারে লোলুপ রসনায় গ্রাস বিস্তার করিয়া জাগিয়া উঠিল। আরো পড়ুন...
23. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মাস ছয়েক পর।
শীত-জর্জর শেষ-হেমন্তের প্রভাতটি কুয়াশা ও ধোঁয়ায় অস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। চরটার কিছুই দেখা যায় না। শেষরাত্রি হইতেই গাঢ় কুয়াশা নামিয়াছে। তাহার উপর লক্ষ লক্ষ ইট পুড়িতেছে, সেই সব ভাঁটায় ধোঁয়া ঘন বায়ুস্তরের চাপে অবনমিত হইয়া সাদা কুয়াশার মধ্যে কালো কুণ্ডলী পাকাইয়া নিথর হইয়া ভাসিতেছে। আরো পড়ুন...
24. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মজুমদার এই দৌত্য লইয়া ইন্দ্র রায়ের সম্মুখে উপস্থিত হইবার কল্পনায় চঞ্চল হইয়া পড়িল। ইন্দ্র রায়ের দাম্ভিকতা-ভরা দৃষ্টি, হাসি, কথা সুতীক্ষ্ণ সায়কের মত আসিয়া তাহার মর্মস্থল যেন বিদ্ধ করে। আর তাহার নিজের বাক্যবাণগুলি যতই শান দিয়া শানিত করিয়া সে নিক্ষেপ করুক, নিক্ষেপ ও শক্তির অভাবে সেগুলি কাঁপিতে কাঁপিতে নতশির হইয়া রায়ের সম্মুখে যেন প্রণত হইয়া লুটাইয়া পড়ে। তবে এবার পৃষ্ঠদেশে আছেন সক্ষম রথী বিমলবাবু; বিমলবাবুর আজিকার এই বাক্য-শাকটি শুধু সুতীক্ষ্ণই নয়, শক্তির বেগে তাহার গতি অকম্পিত এবং সোজা। মজুমদার একটা সভয় হিংস্রতায় চঞ্চল হইয়া উঠিল। আরো পড়ুন...
25. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বিশীর্ণ ন্যুব্জদেহ, রক্তহীনের মত বিবর্ণ পাংশু, এক পলিতকেশ বৃদ্ধ বিস্ফারিত দৃষ্টিতে চাহিয়া-দাঁড়াইয়া থরথর করিয়া কাঁপিতেছিলেন। উত্তেজনার অতিশয্যে কঙ্কালসার বুকখানা হাপরের মত উঠিতেছে নামিতেছে। হেমঙ্গিনী সুনীতিকে বলিলেন, ধর, ধর সুনীতি, হয়তো পড়ে যাবেন উনি। আরো পড়ুন...
26. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
হাউইয়ে আগুন ধরিলে সে যেমন আত্মহারা উন্মত্ত গতিতে ছুটিয়া চলে, ইন্দ্র রায়ও ইহার পর তেমনি দুরন্ত গতিতে ধাবমান হইলেন। রাধারাণীর নিরুদ্দেশের ফলে যে অপমান বারুদের মত সর্বনাশা ক্ষোভ লইয়া বুকের মধ্যে পুঞ্জীভূত হইয়াছিল, সে অপমানের বারুদস্তূপকে ভস্মীভূত করিয়া ইন্দ্র রায়ের বংশকে অগ্নিশুদ্ধ করিয়া লইবার উপযুক্তমত নিষ্কলুষ অগ্নিকণা দিতে পারিত একমাত্র চক্রবর্তী-বংশই, সেই পরম বাঞ্ছিত অগ্নিকণার সংস্পর্শ পাইয়া ইন্দ্র রায়ের এমনি ভাবে অপূর্ব আনন্দে বহ্নিমান হইয়া দশ দিক প্রতিভাত করিয়া তোলাই স্বাভাবিক। আরো পড়ুন...
27. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
চরের উপর কর্মকোলাহল তখনও স্তব্ধ হয় নাই। শেডটার লৌহকঙ্কাল তৈয়ারী ইহারই মধ্যে শেষ হইয়া গিয়াছে, আজ তাহার উপর কারোগেটেড শীট পিটানো হইতেছে। বোল্টগুলির উপর হাতুড়ির ঘা পড়িতেছে। আরো পড়ুন...
28. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
অমলের মুখে অহীন্দ্রের মাথা ধরার সংবাদ এবং অপরাহ্নের সমস্ত ঘটনার কথা শুনিয়া হেমাঙ্গিনী মাত্রতিরিক্তরূপে চিন্তিত হইয়া উঠিলেন। রায় তর্পণের আসনে নীরবে জপে ব্যাপৃত ছিলেন, তাঁহার সম্মুখে বসিয়াই কথা হইতেছিল, তাঁহার ধ্যানগম্ভীর মুখে একটু মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল; বিশেষ একটা উপলব্ধির ভঙ্গিতেই হাসির মৃদুতার সহিত সমতা রাখিয়া মাথাটি বার কয়েক দুলিয়া উঠিল। আরো পড়ুন...
29. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ইন্দ্র রায় বউভাত উপলক্ষ করিয়া আবার সাঁওতালদের নিমন্ত্রণ করিলেন।
কিন্তু সে নিমন্ত্রণও সাঁওতালরা গ্রহণ করিতে সাহস করিল না। শুভার্থী সকলেই নিষেধ করিয়াছিল, হেমাঙ্গিনী বার বার বলিয়াছিলেন, দেখ আমি বারণ করছি, ও তুমি করো না। বিয়ের রাত্রে যখন আসতে দেয় নি ওদের, তখন আবার নেমন্তন্ন করে বেচারাদের বিপদে ফেলা কেন? ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।’ আরো পড়ুন...
30. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
পরদিন প্রভাতেই জমিদার পক্ষ সাজিয়া চরের উপর হাজির হইল, সাঁওতালদের ভাগে বিলি করা জমি দখল করা হইবে।
জমিদার পক্ষকে মোটেই বেগ পাইতে হইল না। লোক জুটিয়া গেল বিস্তর। আদেশ অথবা অনুরোধ করিয়াও লোক ডাকিতে হইল না। আপনা হইতেই গ্রামের সমস্ত চাষী হাল-গরু লইয়া ছুটিয়া আসিল, দলের সর্বাগ্রে আসিল রংলাল। আরো পড়ুন...
31. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শুধু ইন্দ্র রায়ই নয়, হেমাঙ্গিনীও ভুল করিলেন।
ফুলশয্যার দিন-দুই পরেই বর ও কন্যার জোড়ে কন্যার পিত্রালয়ে আসবার বিধি আছে, ‘অষ্টমঙ্গলা’র যাহা কিছু আচার-পদ্ধতি সবই কন্যার পিত্রালয়েই পালনীয়; সুতরাং অহীন্দ্র ও উমা-রায় বাড়িতে আসিল। আরো পড়ুন...
32. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ইহার পর বিরাট একটি মামলা-পর্ব।
সাঁওতালদের জমি এবং নদীর বাঁধ উপলক্ষ করিয়া কলওয়ালার সহিত ইন্দ্র রায় ও চক্রবর্তী-বাড়ির ছোট-বড় ফৌজদারী দেওয়ানী মামলা একটির পর একটি বাধিয়া চলিতে আরম্ভ করিল। আরো পড়ুন...
33. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
আরও মাস তিনেক পর।
মাঘ মাসের প্রথমেই একদিন প্রাতঃকালে কলের মালিক অকস্মাৎ সমস্ত চরটাই দখল করিয়া বসিলেন, রংলাল-প্রমুখ চাষীরা যে-জমিটা অল্পদিন পূর্বে জমিদারের নিকট বন্দোবস্ত করিয়া লইয়াছিল। সে -অংশটা পর্যন্ত দখল করিয়া লইলেন। আরো পড়ুন...
34. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
নিতান্ত বিস্মৃতিবশেই খান-দুই ইস্তাহার এবং একখানা পত্র সুটকেসের নীচে পাতা কাগজের তলায় রহিয়া গিয়াছিল; ঝাড়িয়া মুছিয়া গুছাইতে গিয়া উমা সেগুলি পাইয়াছিল। লাল অক্ষরে ছাপা ইস্তাহারখানা পড়িয়াই উমা ভয়ে উত্তেজনায় কাঁপিয়া উঠিয়াছিল, তারপর সেই পত্রখানা; তাহার মধ্যে সব সুস্পষ্ট-”মৃত্যু মাথায় করিয়া আমাদের এ অভিযান। প্রায় পৃথিবীব্যাপী বিরাট শক্তিগুলি ভরা রাইফেলের ব্যারেল উদ্যত করিয়া রাখিয়াছে। আরো পড়ুন...
35. কালিন্দী - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
গভীর রাত্রি।
রামেশ্বর তেমনি পাথরের মূর্তির মত বসিয়া আছেন। তেমনি দৃষ্টি তেমনি ভঙ্গি। ঘরের মধ্যে তেমনি স্বল্প আলোক, আলোক-পরিধির চারিপাশ তেমনি নিথর অন্ধকার। সুনীতি তেমনি উপুড় হইয়া মাটিতে মুখ গুঁজিয়া পড়িয়া আছেন। উমাকে হেমাঙ্গিনী লইয়া গিয়াছেন। রায় লইয়া যাইতে চান নাই। কিন্তু হেমাঙ্গিনীর কাতরতা দেখিয়া না বলিতেও পারেন নাই। অপরাধীর মত বলিয়াছিলেন, কাল সকালেই পাঠিয়ে দেব উমাকে। আরো পড়ুন...
কেমন লাগলো পড়ার পর অবশ্যই কমেন্টে জানান। এরপর আর কি বই পড়তে চান আমাদের জানান, আমরা আপনার পছন্দের বইটি আগে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
0 تعليقات